জেলা শহর থেকে ওঠে আসা একটা ছেলে। ছোটবেলা কেটেছে খুব দুষ্টুমিতে। স্কুল পালিয়ে, ক্রিকেট খেলে এবং পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পুরো স্কুল লাইফটাই পার করেছেন তিনি। বলছি একজন মানবিক তরুণ ফাহিম খানের কথা।
শরীয়তপুর জেলা শহরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তিনি। বাবা আবদুর রহমান খান একজন সরকারি চাকরিজীবী। পরিবারের সবাই বলতো, এই ছেলেকে দিয়ে কিচ্ছু হবে নাহ। শুধু একমাত্র মা ভরসা রাখতেন, ছেলে বড় হয়ে ঠিক হয় যাবে। বাবা স্বপ্ন দেখতেন ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরিজীবী হবে।
ফাহিমের স্কুল জীবন শুরু হয় জাজিরার মুজিব রাসেল স্কুলে। ক্লাসের রোল নম্বর ছিল সবার পেছনে। মাধ্যমিক কাটে শরীয়তপুর জেলার পালং তুলাসার গুরুদাস স্কুলে। এসময় তিনি নিজের সম্পর্কে ভাবতে শেখেন। একটু ভালো কিছু চিন্তা করেই ঢাকাতে চলে আসা হয় তার। কবি নজরুল কলেজে তার কলেজ জীবন। একটু পড়াশুনায় মনোযোগী হতে শুরু করলেন তিনি।
কিছু দিন আগেও ক্যারিয়ার নিয়ে এই ছেলের কোনো চিন্তাই ছিল না। এসএসসি/মাধ্যমিকের রেজাল্ট মোটামুটি হলো, পরিবার খুশি এই ছেলের রেজাল্ট দেখে। কারণ তিনি দস্যিপনার পাশাপাশি পড়েছেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে বড় ধাক্কা খেলেন ছেলেটি। রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়ায় পরিবারের চাপ প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে।
কিন্তু ফাহিম প্রতিনিয়ত নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, একটা খারাপ রেজাল্ট কারো জীবন শেষ করার ক্ষমতা রাখে না। যেখানেই পড়াশুনা করেন না কেন, ভালো কিছু করবেন। কিন্তু পরিবার মানলেও আত্মীয় স্বজন মানছে না। একজন আত্মীয় তো বলেই বসলেন, তাকে দোকানে চাকরি করার জন্য। মাঝে মাঝে জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়, এই সময়ে তার জীবন সবচেয়ে কঠিন সময় পাড় করছে।
কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হলো না। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হলো না। পরিবারকে অনেক বুঝিয়ে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তিনি। জীবনের সংগ্রামটা এখন থেকেই শুরু।
ফাহিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই বিতর্কে অংশগ্রহণ করি। এরপর পাবলিক স্পিকিং, প্রেজেন্টেশন স্কিল বাড়ানো, নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করি। এক বছর পুরো সংগ্রাম করি। একটু সময় লাগলেও তখন থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া শুরু করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, ন্যাশনাল পাবলিক স্পিকিং অ্যাওয়ার্ড, বিজনেস কেস কম্পিটিশন চ্যাম্পিয়ন। সফলতা যেন দারুণভাবেই ধরা দিল।’
ফাহিম ছোটবেলা থেকেই সংগঠন করতে ভালোবাসেন। সেই ভালো লাগা থেকেই ২০১৫ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি বন্ধুরা মিলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হাসিমুখ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সংগঠন পুরো বাংলাদেশে একযোগে কাজ শুরু করে। কখনো সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে প্রোগ্রাম করে, কখনো সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে আবার কখনো রক্তদান কর্মসূচি করে। এক লাখেরও বেশি মানুষকে রক্ত দিয়ে সহায়তা করেন তারা।
হাসিমুখের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০০০ এর চেয়েও বেশি। শুধু এ সামাজিক সংগঠনেই থেমে থাকেনি ছেলেটি। বন্ধুদের সাথে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রেড লাইন’ নানে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রেড লাইন জন্ম হয় ১৫০ টাকার জার্সি বিক্রির মাধ্যমে। তেমন কোনো ইনভেস্ট ছিল না তাদের। শুধু কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক পরিকল্পনা আজ রেড লাইনের পরিধি বাড়াতে শুরু করেছে। দিনের পর দিন বিজনেস বুঝতে চেষ্টা করছেন ফাহিম।
মাঝে মাঝেই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন তিনি। কিন্তু থেমে থাকেননি। এত প্রচেষ্টার পর এখন রেড লাইনের নিজস্ব সুবিশাল টি-শার্ট তৈরির কারখানা রয়েছে। করপোরেট সলুশন নিয়ে কাজ করা, আছে আইনে সহায়তা কেন্দ্র, আইটি সেবা, ইভেন্ট ফার্ম, ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা এবং সুবিশাল ই-কমার্স সেবা।
ফাহিম বলেন, ‘অনেক বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এই কোম্পানিতে। দিন শেষে এটাই প্রমাণ হয়, আপনি কোথায় পড়েন, কোথায় কাজ করেন, এগুলো আপনার সফলতা আটকাতে পারে না। সফলতার পথে প্রতিষ্ঠান কোনো বাঁধা নয়।’
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহিম খান চান সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় সফল হতে। চাকরি করতে নয়, চাকরি দিতে চান তিনি। এভাবেই প্রতিনিয়ত তিনি তৈরি করছেন সফলতার গল্প…।
Sharing is caring!
যোগাযোগ ঠিকানাঃ রেজিঃ কার্যালয়ঃ শেখ মঞ্জিল, আদালত পাড়া, ওয়ার্ড নং-৯, বরিশাল সদর, বরিশাল।
01711358963
01980222333
nomanibsl@gmail.com
fflbd18@gmail.com
©
Website Design and Developed by ENGINEERS BD NETWORK