মাসুমা স্কুল জীবন থেকে ভাবতেন হাজারও নারীকে নিয়ে। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য আরেকজন নারীকে কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায় এবং কিভাবে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে দেশকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে নেওয়া যায় সে চিন্তা করতেন সব সময়? এখন চল্লিশোর্ধ মাসুমা খানম মিষ্টি স্বপ্ন পূরণের পথে সাফল্যের দেশে হাঁটছেন।
তিনি থাকেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। আজ তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। পনির তৈরির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাসুমা খানম মিষ্টি। নগরে বা শহরে আমরা পাস্তা বা ফাস্টফুডের সাথে যে চীজ পাই সে সকল চীজ বা পনীর দুধ থেকে তৈরি করেন তিনি। তাঁর তৈরি চীজ দেশের চাহিদা পূরণ করে এখন রপ্তানী হয় দেশের বাইরে।
ওই গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কেউ সাইকেলে, কেউ ভ্যানে, আবার কেউ ইজি বাইকে করে নিজ নিজ দুগ্ধ খামার থেকে দুধ আনেন খামারীরা। গত কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলগুলোতে ছিলো না কোন দুগ্ধ খামার। এসব খামার গড়ে উঠেছে মাসুমা খানমের চীজ কারখানাকে কেন্দ্র করে। একাধিক খামারী জানান, তেমন কোন চীজ কারখানা ছিল না বলে তারা শুধু খামার করার স্বপ্নই দেখে যেতো কোন খামার করতে সাহস পাচ্ছিল না। এখন মাসুমা খানমের চীজ কারখানা হওয়ার কারণে এবং এখানে দুধ দিয়ে টাকা সহজে পাওয়ার কারণে তারা খামার করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং নতুন নতুন খামার করছে।
জানা যায়, স্বামী সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে ১৯৯৫ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে মাত্র ২৫০০ টাকা ঋণ নিয়ে একটি হাঁস মুরগীর খামার দিয়ে যাত্রা শুরু করেন মাসুমা খানম মিষ্টি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে খামার বড় করেছেন উপার্জিত অর্থ দিয়ে। করেছেন নিজস্ব দুগ্ধ খামার। নিজের খামারের গরুর দুধ থেকে অল্প পরিসরে তৈরি করা শুরু করেছিলেন পনীর। আস্তে আস্তে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর চীজ কারখানায় গরুর দুধ আসতে শুরু করে এবং এখন বড় পরিসরে তৈরি হচ্ছে পনির। এখন পর্যন্ত তাঁর চীজ কারখানা ও দুগ্ধ খামারে মোট ৪৫ জন পুরুষ ও মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। জেলার অনেক দুস্থ ও অবহেলিত এসব মানুষ তাঁর চীজ কারখানায় কাজ করে দু’বেলা দু‘মুঠো আহার যোগার করতে সক্ষম হচ্ছে।
এই চীজ কারখানায় কর্মরত নারী শহিনা, বেলী ও নিহার জানান, মাসুমা খানম মিষ্টির ভালোবাসা, আদর, স্নেহ না পেলে তারা আজ আত্মনির্ভরশীল হতে পারতেন না। তাদের অভাব ও অসময়ে মিষ্টি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সাহস যুগিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী করার চেষ্টা করেছেন।
মাসুমা খানম মিষ্টি জানান, স্বামী সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে খুব অল্প পরিসরে একটি হাঁস মুরগীর খামার দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। জীবনে অনেক শুভাকাঙ্খীর অনুপ্রেরণায় তিনি ধীরে ধীরে এতদূর পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই সফলতার পেছনে পরিবার ও সাথে যারা কাজ করে তাদের সহযোগিতা রয়েছে অনেক।”
ক্ষুদ্র নারী উদ্বোক্তার জন্য তিনি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে পুরুস্কৃত হয়েছেন একাধিকবার। ২০১৮ সালে বর্ষসেরা ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ১৩তম ‘সিটি ক্ষুদ্র নারী উদ্বোক্তা পুরুস্কার’ পান তিনি। তাঁর সাফল্য এখন দেশ জুড়ে বিস্তৃত। তিনি বিশ্বাস করেন একদিন তাঁর মতো হাজারো নারী বাংলাদেশে সফলকাম হবে।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, মাসুমা শুধু নিজে কাজ করছেন না, বেকার যুব নারী-পুরুষদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বহু নারী পুরুষকে স্বাবলম্বী করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি ঠাকুরগাঁও নারীদের আদর্শ। মাসুমাকে অনুসরণ অনুকরণ করে অন্য নারীরাও উদ্যোক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার জিতে আনবেন বলে প্রত্যাশা করি।